মডার্ন এভিডেন্স বেসড মেডিসিন বনাম অল্টারনেটিভ মেডিসিন
Modern Evidence Based Medicine যাকে আমরা ভুল করে এলোপ্যাথি বলে থাকি, তার ওষুধের কার্যকারিতা মূলত নিম্নলিখিত চারটি পদ্ধতি দ্বারা নির্ধারণ করা হয়।
১) Large Scale : আমাদের শরীর কিছু কিছু রোগকে নিজেই সারিয়ে তুলতে পারে। কোনো কোনো মানুষের শরীরে এই স্বনিরাময় পদ্ধতি খুবই ভালো ভাবে ক্রিয়াশীল হয়, আবার কারো কারো ক্ষেত্রে এটি ভালো ভাবে কাজ করে না। রোগ সেরে যাওয়ার পেছনে আবার মানসিক পরিস্থিতি খুব গভীর প্রভাব ফেলে, যাকে আমরা প্লাসিবো এফেক্ট বলি। কোনো রুগীকে যদি কোনো ওষুধ দেওয়া হয়, এবং রোগী টি যদি সুস্থ হতে থাকে তবে বলা মুশকিল যে তিনি ওষুধের কার্যকারিতার জন্য সেরে উঠছেন, নাকি তার শরীরের নিজস্ব সুস্থ হওয়ার পদ্ধতিতে সেরে উঠছেন, নাকি প্লাসিবো প্রভাবে সেরে উঠছেন। তাই ওষুধের কার্যকারিতার সঠিকভাবে পরিমাপের জন্য শরীরের নিজস্ব সুস্থতার পদ্ধতি এবং প্লাসিবো প্রভাবকে বাদ দেওয়া আবশ্যিক। যত বেশি সংখ্যক মানুষের ওপর ওষুধটি পরীক্ষা হবে, এই দুই ভ্রান্তির প্রভাব তত ছোট হতে থাকবে এবং ওষুধের কার্যকারিতা ততটাই নির্ভুল ভাবে পরিমাপযোগ্য হবে। ওষুধের কার্যকারিতা নির্ধারণের সময়ে তাই ওষুধটি large scale অর্থাৎ বেশি সংখ্যক রুগীর ওপর প্রয়োগ করা বাঞ্ছনীয়।
২) Randomization : বয়স, ওজন, ভৌগলিক অবস্থান, লিঙ্গ ইত্যাদি প্যারামিটার গুলি মানব শরীরে রসায়নের ওপর বিভিন্নভাবে প্রভাব ফেলে। হতে পারে কোনো ওষুধ কম বয়সীদের ওপর অত্যন্ত ভালো ভাবে কাজ করছে কিন্তু বয়স্ক লোকদের ওপর কাজ করছে না। তাই ওষুধটি বিভিন্ন বয়সের, বিভিন্ন ওজনের, বিভিন্ন দেশের মানুষের ওপর পরীক্ষা করে ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে একটি গড় সিদ্ধান্তে আসতে হয়।
৩) Placebo Control : অনেক সময় কিছু রোগ প্রাকৃতিক ভাবেই সেরে যেতে পারে অথবা আমি ওষুধ খাচ্ছি এই মানসিক সান্তনা থেকে ও সেরে যেতে পারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মিলিটারি বেস ক্যাম্পে একজন আমেরিকান ডক্টর হেনরি বেচার খেয়াল করেন হাসপাতালে ব্যথা কমানোর ওষুধ মরফিন শেষ হয়ে গেছে। নতুন মরফিন ইনজেকশন আসতে অনেক সময় লাগবে, এইদিকে আহতদের অপারেট করতেই হবে। অগত্যা ডঃ বেচার এনসথেশিয়ার জন্য রোগীদের মরফিনের বদলে স্যালাইন জল ইনজেক্ট করেন। অদ্ভুত ভাবে ৫০%বেশি রুগী সেটিকে মরফিন ভেবে নিয়ে রিল্যাক্সড হয়ে ডাক্তার কে অপারেশন করতে দ্যান। সেদিন থেকে মেডিক্যাল সাইন্স বুঝতে পারে শরীরের ওপর মনের কি ব্যাপক প্রভাব। এই প্রভাবকে বলা হয় প্লাসিবো এফেক্ট। তাই ওষুধের কার্যকারিতা প্রমাণের সময় একদল মানুষকে আসল ওষুধ দেওয়া হয় এবং একদল মানুষ কে নকল ওষুধ বা প্লাসিবো দেওয়া হয়। আলাদা আলাদা ভাবে আসলে ওষুধ পাওয়া রোগী এবং নকল ওষুধ খাওয়া রুগীদের ওপর সুস্থ হওয়ার হার লক্ষ্য করা হয়। ওষুধের সঠিক কার্যকারিতা পরিমাপের সময় প্লাসিবো এফেক্টের ভ্রান্তি কে বাদ দেওয়া হয়।
৪) Double Blind : রোগী যদি জানতে পারে যে সে প্লাসিবো পেয়েছে, না আসল ওষুধ পেয়েছে তালে সে বায়াসড (পক্ষপাত) হয়ে যেতে পারে। তাই রোগী কে জানতে দেওয়া হয় না যে সে প্লাসিবো না আসল ওষুধ পেয়েছে। এই পদ্ধতিকে সিংগেল ব্লাইন্ড পদ্ধতি বলে। ওষুধের কার্যকারিতা পরিমাপের এই পরীক্ষায় নিযুক্ত মেডিকেল অফিসারের ওষুধের কার্যকারিতা সম্পর্কে পক্ষপাত হতে পারেন বা বায়াস হতে পারেন। তিনি তার পক্ষপাতিত্ব থেকে ওষুধের কার্যকারিতা সংক্রান্ত পরীক্ষালব্ধ বিভিন্ন ফলাফল নিরপেক্ষভাবে রিপোর্ট নাও করতে পারেন। তাই মেডিকেল অফিসার ও জানতে পারেন না কোন রোগী আসল ওষুধ এবং কোন রোগী নকল ওষুধ পেয়েছে। একে বলে ডাবল ব্লাইন্ড পদ্ধতি।
এই চারটি জিনিস মূলত মাথায় রেখে সারা পৃথিবীতে Modern Evidence Based Medicine এর ট্রায়াল হয়। ভারতবর্ষের ২০১৪ সালের নভেম্বরে আয়ুশ নামের একটি মন্ত্রক খোলা হয় যার দ্বারা ভারতের বিভিন্ন অল্টারনেটিভ মেডিসিন নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এই মন্ত্রকের মধ্যে আয়ুর্বেদিক, হোমিওপ্যাথি, ইউনানী, সিদ্ধা ইত্যাদি মেডিসিন গুলি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
নিচের ' ক ' চিত্রটি হলো আয়ুশের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া। আয়ুশ বলছে অল্টারনেটিভ মেডিসিনের ওষুধ গুলো ড্রাগ এন্ড কসমেটিক্স অ্যাক্ট ১৯৪০ এবং ১৯৪৫ দ্বারা নিয়ন্ত্রত। এই অ্যাক্টটি বলে (চিত্র ' খ ' ) আয়ুর্বেদিক, ইউনানী, সিদ্ধা ওষুধের সেফটি স্টাডি এবং প্রুফ অফ এফেকটিভনেস দরকার নেই। আয়ুর্বেদিক, ইয়ুনানি সিদ্ধা মেডিসিনের পেটেন্ট বানাতে (চিত্র ' গ ' ) তার সেফটি স্টাডি দরকার নেই, এবং এই ওষুধ গুলির কার্যকারিতা পাইলট স্টাডির মাধ্যমে দেখানো যেতে পারে। করোনা কালের সারা দেশ যখন মেডিকেল ইমার্জেন্সি সাথে লড়ছিল, করোনিল নামের অবৈজ্ঞানিক আয়ুর্বেদিক ওষুধটি এই পাইলট বা ছোট স্টাডির মাধ্যমে তার ভুয়ো কার্যকরিতা দেখিয়েছিল। করোনিল বানাতে উপরে বর্ণিত চারটি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়নি। ভারতবর্ষে কোটি কোটি মানুষ এরকম হাজার হাজার অল্টারনেটিভ মেডিসিনের প্রোডাক্ট ব্যবহার করে যেগুলির কেবল ফুড, হেলথ সাপ্লিমেন্টারি বা নিউট্রিসিয়াস লাইসেন্স রয়েছে কিন্তু ড্রাগ লাইসেন্স নেই। পৃথিবীর প্রায় সমস্ত দেশে অল্টারনেটিভ মেডিসিন প্র্যাকটিস হয়, কিন্তু ভারতবর্ষ একমাত্র দেশ যেখানে অল্টারনেটিভ মেডিসিনের একটা গোটা মন্ত্রক রয়েছে এবং এই বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশন, পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন এবং পি এইচ ডি করা যায়।
আয়ুর্বেদিক, হোমিওপ্যাথি, ইউনানী ওষুধে আমার কোন আপত্তি নেই কিন্তু সেই ওষুধের ট্রায়াল large scale, double blind, placebo controlled এবং randomize হতে হবে।
Written by rourab
23th November Thursday 2023
Share
Comments
hi I am aloke
Comments
Excellent study and representation
Write A Comment