বৈমানিক শাস্ত্র


নীচের ভিডিওটি তে ইসরো প্রধান বলছেন "concept of vimana, architecture, construction technology .." এই গুলি সবই আমাদের প্রাচীন ভারতে সংস্কৃতি ভাষাতে নাকি অনেক দিন আগেই বলা হয়ে গেছে। মূল বক্তব্যের সুরে তিনি বলেছেন প্রাচীন ভারতের বৈজ্ঞানিক চর্চা আরব হয়ে ইউরোপ পৌঁছয় এবং ইউরোপ সেটা রি প্যাকেজ করে।

উক্ত ভিডিওর বক্তব্যে অনেকগুলি পয়েন্ট আছে, অনেক বক্তব্যে ইসরো প্রধান অতি সরলীকরণ করে ফেলেছেন। প্রতিটি পয়েন্ট নিয়ে অনেক কথা বলা যায়, কিন্তু আজ আমি শুধু প্রাচীন ভারতের বিমান নিয়েই কথা বলবো।

প্রাচীন ভারতের বিমান প্রযুক্তি নিয়ে ইন্টারনেট ঘাটাঘাটি করলে সবার আগে আপনি পৃথিবী বিখ্যাত কনস্পিরেসি থিওরিস্ট David Childress এর নাম পাবেন। ১৯৯১ সালে তিনি একটি বই লেখেন যার নাম "Vimana Aircraft of Ancient India and Atlantis"। ডেভিড এর আগেও অনেক বার অনেক রকম বিখ্যাত কনস্পিরেসি থিওরির কথা বলেছিলেন, যেগুলির মধ্যে উল্লেযোগ্য "Ancient Aliens", " Andromeda The Secret File", "Ark of God" ইত্যাদি। ডেভিড এর বইটির মূল আঁধার ছিল ১৯২০ সালের পণ্ডিত সুব্বারা শাস্ত্রীর লেখা "বৃহদ বিমান শাস্ত্র"। ১৯৭৩ সালে শাস্ত্রীর এই বইটি ইংরাজিতে অনুবাদ করা হয় "Vyamanik Shastra" নামে।

বইটির মূল্য বক্তব্য আলোচনার আগে প্রথমে দেখা যাক প্লেন কি করে উড়ে। প্লেনের মাথার দিকের আকৃতি এরকম হয় যে প্লেন যখন সামনের দিকে চলতে থাকে তখন প্লেনের ওপর দিকের বাতাস কে বেশি পথ অতিক্রম করতে হয়, বাতাস স্থিতিস্তাপক হওয়ার জন্য তাই ওপর দিকের বাতাসের গতি বেড়ে যায়। প্লেনের নিচের দিকের বাতাস কে কম পথ অতিক্রম করতে হয়, তাই নিচের বাতাসের গতি কম হয়। বার্ণলি প্রিন্সিপাল আমাদের বলে বাতাসের গতি বেশি হলে তার চাপ কমে, এবং গতি কম হলে বাতাসের চাপ বেশী হয়, তাই নিচের বাতাস প্লেনটি কে ওপরে ঠেলে তোলে। প্লেনের ওড়ার পেছনে মূলত বার্নলি প্রিন্সিপাল এবং নিউটনের তৃতীয় সূত্র কাজ করে।

অন্যদিকে হেলিকপ্টার মূলত নিচের বাতাস কে ঠেলে ওপরে ওঠে। গ্যাস বেলুনের ক্ষেত্রে গরম গ্যাসের ভর বাতাসের ভরের থেকে কম হওয়ায় বেলুনটি ওপরে উঠতে শুরু করে। রকেটের ক্ষেত্রে ফুয়েল যখন প্রজ্বলিত হয়ে বেরোয় তখন রকেটের দেহকে একটি ধাক্কা দেয় যা রকেট টি কে ওপরে উঠিয়ে দেয়।

প্লেন, রকেট, বেলুন এবং হেলিকপ্টার এরা মূলত নিউটনের গতি সূত্র, বার্নোলি প্রিন্সিপাল, আইডিয়াল গ্যাসের বিভিন্ন সূত্র গুলির ওপর আধার করে তৈরি হয়েছে।

কিন্তু বৈমানিক শাস্ত্র বই টি তে সিলিন্ট্রিকাল আকৃতির একটি বৃহৎ ফ্লাইট উড়ার বেসিক মেকানিজমের কথা বলাই হয়নি। বইটিতে মূলত বৈমানিক কি খাবে, কি ড্রেস পড়বে, তাকে কি ভাবে ট্রেনিং দেওয়া হবে, কিভাবে ফ্লাইট টি তৈরি হবে ইত্যাদি রিপোর্ট করেছে। বইতে বিমানের যে ছবি গুলো দেখি সেই গুলি মূল বই টি তে পাওয়া যায় না, ১৯৭৩ সালের ইংরেজি অনুবাদ সংস্করণ এ এই ছবি গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

১৯৭৪ সালে আই আই এস সি ব্যাঙ্গালোরে পাঁচ জন এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার বৈমানিক শাস্ত্র নিয়ে একটি পেপার পাবলিশ করেন যার নাম "A Critical Study of The Work Vymanik Shastra"। এই পেপারে বৈমানিক শাস্ত্র কে একটি আজগুবি উদ্ভট কল্পনা বলে দাবি করে বলা হয় "the author whoever he be shows a complete lack of understanding of the dynamics of the flight of heavier than air craft"। ইসরো প্রধান একজন রকেট বিজ্ঞানী তার জ্ঞানের আঁধার বৃহৎ। একজন সাধারণ বিজ্ঞান পিপাসু মানুষ হিসেবে তাঁর কাছে কিছু প্রশ্ন রইল।


১)ডানা ছাড়া, সিলিন্ত্রিকাল বৃহৎ আকৃতির একটি ফ্লাইট কি করে ভার্টিক্যাল টেক অফ বা ল্যান্ডিং করবে?

২)এই বিমানে জ্বালানি হিসেবে পারদ ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। পারদ যা কিনা জ্বলে না, কমব্যস্ট হয় না তা কি করে একটি ইঞ্জিনের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হবে?


ভারত বিখ্যাত, লাখ লাখ সাবস্ক্রাইবার ওয়ালা ইউটিউব চ্যানেল Abhi and Niyu, Beer Biceps, Praveen Mohan, Big Branco এবং বিভিন্ন হোয়াটস অ্যাপ, ফেসবুকের পোষ্ট গুলি বহুদিন ধরে বৈমানিক শাস্ত্র কে প্রাচীন ভারতীয় বিজ্ঞানের কীর্তি হিসেবে দেখিয়ে অপবিজ্ঞান চর্চা করছে। খারাপ লাগে ভারতীয় বিজ্ঞান চর্চার অন্যতম ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর ইসরো প্রধান যখন সেই একই পথে হাঁটেন। ইসরো প্রধান নিঃসন্দেহে অনেক বড়ো বিজ্ঞানী, দক্ষ প্রশাসক কিন্তু তিনি বিজ্ঞান মনস্ক নন। চন্দ্রযান এর সাফল্য ইসরো প্রধানকে ইতিহাসের পাতায় স্থান দেবে ঠিকই কিন্তু এই বিশাল দেশের সাইন্টিফিক টেম্পারামেন্ট এর যে অপরিসীম ক্ষতি তিনি করেছেন তা এক ক্ষমাহীন অপরাধ হয়ে থাকবে।।


Written by rourab

11th September Monday 2023



   Share  

Write A Comment