ঈশ্বর এবং প্রাণের সৃষ্টি
আমি অনেক পড়াশোনা জানা উচ্চ শিক্ষিত মানুষকে বলতে শুনেছি বিজ্ঞান এবং ঈশ্বর বিশ্বাসের মধ্যে কোন স্ববিরোধিতা নেই। তারা বলেন বিজ্ঞান সাধনার সাথে সাথে ঈশ্বর সাধনাও করা যায়। এমনকি আমরা অনেক বিখ্যাত বিজ্ঞানীকে জানি তারা ঈশ্বর বিশ্বাস করেন। এই বিজ্ঞান মনস্ক ঈশ্বর বিশ্বাসীদের বক্তব্যের কয়েক রকম প্রকারভেদ লক্ষ্য করা যায়।
(১) ঈশ্বর বিশ্বব্রহ্মাণ্ড, ফিজিক্সের ল গুলো এবং প্রাণিজগৎ বানিয়েছেন।
(২) ঈশ্বর প্রতিনিয়ত মানুষের প্রাত্যাহিক জীবনের নাক গলান। ইচ্ছে করলেই ঈশ্বর যে কোন কিছু ঠিক করে দিতে পারেন, আবার তিনি বিগড়ে ও দিতে পারেন।
(৩) ঈশ্বরকে ডেকে শুধু মনে শান্তি পান, শক্তি পান।
এই শুধু (৩) নম্বরদের নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। তারা যদি ঈশ্বরকে ডেকে শান্তি পান, মনে বল পান, বাঁচার তাগিদ পান, খুব ভাল কথা। কিন্তু কিছু মানুষ এই (৩) এ সীমাবদ্ধ থাকেন না। তারা সাথে সাথে (১) নম্বরের অত্যন্ত জটিল বৈজ্ঞানিক প্রশ্ন গুলো ঈশ্বর দিয়ে আপব্যাখ্যার চেষ্টা করেন এবং কেউ কেউ (২) নম্বরের চরিত্র গুলোও মিশিয়ে ফ্যালেন। এখানেই গোল বাধে।
এখানে আমরা শুধু মাত্র প্রাণিজগতের সৃষ্টি নিয়ে কথা বলব। প্রাণী জগতের সৃষ্টি নিয়ে বেশিরভাগ মানুষ মূলত দুটি সম্ভাবনার কথা বলেন : ১) প্রাণীজগৎ ঈশ্বরের সৃষ্টি ২) প্রাণীজগতের সৃষ্টি একটি আকস্মিক দুর্ঘটনা।
ঈশ্বরের সৃষ্টি (Designed)
প্রাণের সৃষ্টির পেছনে যদি সৃষ্টিকর্তা বা ঈশ্বর যদি থাকেন , প্রশ্ন টি এখানেই শেষ হয়ে যায়না। তখন প্রশ্ন জাগে সৃষ্টি কর্তা কে সৃষ্টি করলেন? প্রাণের সৃষ্টি অবশ্যই একটি জটিল বিষয়। প্রাণের সৃষ্টির পেছনে সৃষ্টি কর্তা ঈশ্বরের অস্তিত্ব আরও অত্যন্ত একটি জটিল ধারণা হতে হবে। যারা প্রাণের সৃষ্টির পেছনে ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তার কথা বলেন তারা কিন্তু এই জটিল ঈশ্বরের সৃষ্টি নিয়ে কিছুই বলেন না।
আকস্মিক দুর্ঘটনা (Accident)
একটি বিশাল আস্তাকুঁড়ের ওপর দিয়ে কাল বৈশাখী বয়ে যাওয়ার পর বোয়িং বিমান তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা যতটা, লক্ষ্য লক্ষ্য বছর ধরে তৈরি হওয়া প্রাণীর এই জটিল শারীরিক গঠন আকস্মিক দুর্ঘটনায় তৈরি হওয়া সম্ভাবনা ও ততটাই।
প্রাণের সৃষ্টি ডিজাইনড এবং দুর্ঘটনা কোনটি নয়। প্রাণের সৃষ্টির সবচেয়ে সুন্দর, যৌক্তিক, এবং প্রামাণ্য ব্যাখ্যা হল ডারউইনের ন্যাচারাল সিলেকশন বা প্রাকৃতিক নির্বাচন। পৃথিবীতে প্রথম প্রাণের সৃষ্টি একটি রাসায়ানিক বিক্রিয়ার ফলে ঘটে। প্রায় ৩৫০ থেকে ৪০০ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে একটি অত্যন্ত অদ্ভুত স্ব প্রতিলিপি (self replicating) রাসায়ানিকের উদ্ভব ঘটে যেটি নিজের প্রতিলিপি বা কপি তৈরি করতে পারে। এই প্রতিলিপি গুলো আবার নিজেদের কপি তৈরি করতে পারে। আর এই কপি তৈরির সময় সে হুবহু কপি করতে পারে না। তারফলে আসল এবং কপির মধ্যে কিছু পার্থক্য থেকে যায় (Gene Mutation)। এই ভিন্ন রকমের কপি গুলির মধ্যে কিছু কপি পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্য রেখে আরও কপি তৈরি করতে পারে, কিছু কপি নিজেদের কপি এত ভাল করে তৈরি করতে পারে না। এই ভাবে পরিবেশের অনুকূলে যে যত ভাল নিজের কপি তৈরি করতে পারল, তারাই ক্রমশ এই পৃথিবীতে টিকে রইল। এই ভাবেই এই রাসায়ানিক থেকে প্রাণের সৃষ্টি হয় এবং সেই প্রাণ থেকে কোটি কোটি বছর বিবর্তনের মাধ্যমে মানুষের মত জটিল প্রাণীর সৃষ্টি হয়।
ঈশ্বরের অস্তিত্ব একটি আনফলসিফায়েবেল দাবী। এই কথা সত্যি, ঈশ্বরের অস্তিত্ব বৈজ্ঞানিক ভাবে নস্যাৎ করা অসম্ভব। ঈশ্বরের অস্তিত্ব নস্যাৎ করা সম্ভব নয় বলে ঈশ্বর আছেন, এটি ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে আস্তিকদের সবচেয়ে দুর্বলতম যুক্তি। যে সব উচ্চ শিক্ষিত, ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, গবেষক এবং বৈজ্ঞানিকরা ঈশ্বররে পক্ষে গলা ফাটান, এবং নিজেদের বিজ্ঞানমনস্ক বলে দাবী করেন, তাদের ঈশ্বরবিহীন পৃথিবী এবং ঈশ্বর-সহ পৃথিবীর বৈজ্ঞানিক পার্থক্য গুলিকে স্পষ্ট করে নিরূপণ করতে হবে। আপনি একজন জীব বিজ্ঞানী হয়ে কখনই মানতে পারেন না যে নোয়ার নৌকায় ডাইনোসর ছিল। আপনি একজন মহাকাশ বিজ্ঞানী হয়ে বাইবেলের কথা মানতে পারেন না, যে বাইবেল গ্যালেলিওর জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছিল। আপনি একজন জিনতত্ত্ববিদ হয়ে সাত দিনে পৃথিবী ও মানুষ সৃষ্টি, অথবা ঈশ্বরের শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে মানুষ সৃষ্টির কথা কথা কিছুতেই মানতে পারেন না।
আমি হিন্দু পরিবারে জন্মেছি তাই আমি বিশ্বাস করবো যে ব্রহ্মার শরীর থেকে মানুষের সৃষ্টি হয়েছে। আমি মুসলিম বা খ্রিস্টান পরিবারে জন্মালে বিশ্বাস করতাম আদম এবং ইভের থেকে মানুষের সৃষ্টি। আমি কি বিশ্বাস করবো তা আমি পৃথিবীর কোন অংশে জন্মেছি তার ওপর কেন নির্ভর করবে? তাই প্রমাণ ভিত্তিক বৈজ্ঞানিক সত্যকে বিশ্বাস করাই শ্রেয়তম। প্রমাণ ভিত্তিক বৈজ্ঞানিক সত্য যদি আপনার কাছে ধর্ম ও ঈশ্বর বিশ্বাসের থেকেও পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সত্য হয়, অথচ আপনি ৯ ন্যানোমিটার ফিনফেট টেকনোলজির, হাইস্পিড অক্টা কোর মোবাইলে AstroTalk অ্যাপটি খুলেছেন, সেটা হবে আপনার সব থেকে বড় ভণ্ডামি।
Written by rourab
16th April Wednesday 2025

Share
Latest Articles
The Protein Paradox: Why India Struggles to Get Enough
22th October Wednesday 2025
India is a country where about 80% of people suffer from protein deficiency. However, protein is very important as it helps build muscles, supports cognitive function, repairs body tissues, produces enzymes and hormones, and maintains overall health and immunity.
Undoubtedly, we need protein, and it does not matter whether it is sourced from animals or plants. Proteins are made up of 20 amino acids, out of which 9 essential amino acids cannot read more..
মাইক্রোওভেন বনাম গ্যাস ওভেন
22th August Friday 2025
খাবার রান্না করা মানে আসলে খাবারে তাপ সঞ্চারণের পদ্ধতি। ভারতীয় রান্নাঘর ঘর গুলোতে রান্না করার জন্য আমরা সাধারণত দুই ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করি। ..
১)গ্যাস ওভেনের বা কাঠ কয়লার ইনফ্রারেড ইলেট্রম্যাগেটিক রেডিয়েশন থেকে নির্গত read more..
ব্যাকটেরিয়া খেকো ডাক্তার
19th July Saturday 2025
আধুনিক চিকিৎসা বিদ্যায় মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া ঘটনা গুলির কথা বলতে শুরু করলে একদম প্রথম দিকে আসবে অস্ট্রেলিয়ার ব্যারি জেমস মার্শালের কথা। প্রথাগত চিকিৎসা পদ্ধতি কে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন ব্যারি।
আশির দশকের গোড়া অবধি গ্যাস্টারাইটিস read more..
ড্রাগন কন্যা
19th March Wednesday 2025
হিজাব নাকি বোরখা।
ঘোমটা নাকি রাহুর গ্রাস ।
ঠিক করবে কোথায় যাবি তুই।
স্বর্গ, নরক আর বেহেস্ত।
এই হেলমেট, এই পোশাক
তোমায় নিয়ে যায় মহাকাশ।
মহাকাশ মহাকাশ মহাকাশ ||
read more..
ঈশ্বর নেই প্রমাণের ব্যর্থতা ঈশ্বরের অস্তিত্বের স্বপক্ষে সবচেয়ে শক্তিশালী যুক্তি?
11th August Sunday 2024
ঈশ্বরের অস্তিত্বের স্বপক্ষে বলতে গিয়ে অনেকেই 'ঈশ্বর নেই' প্রমাণ করতে বলেন। তারা মনে করেন ঈশ্বর নেই প্রমাণের ব্যর্থতা ঈশ্বরের অস্তিত্বের স্বপক্ষে সবচেয়ে বড় যুক্তি। আস্তিকরা ঈশ্বরের অস্তিত্বর স্বপক্ষে যে সব যুক্তি read more..
ধর্ম এবং নৈতিকতা
26th July Friday 2024
অনেকেই বলেন ধর্ম আমাদের মূল্যবোধ এবং নৈতিকতা তৈরি করে দেয়। অথচ তলিয়ে ভাবলে দেখা যায় মানুষের মূল্যবোধ এবং নৈতিকতা একটি অত্যন্ত আধুনিক আইডিয়া। মাত্র একশো বছর হয়েছে মানুষ ঠিক করে বুঝতে পেরেছে ক্রীতদাস প্রথা অমানবিক। এমনকি read more..
ডিম কি menstrual waste?
18th July Thursday 2024
মুরগির ডিমকে অনেকেই menstrual waste বলে থাকেন এবং যেহেতু এটি একটি waste এবং নোংরা জিনিস তাই ডিম খেতে অনেকেই না করেন।
আদপেই মুরগির ম্যামেল প্রাণীদের মত menustral হয় না। যদি সরলীকরণ করে মুরগির ডিমকে menustral waste বলতেই হয় তবে ফুল ও কিন্তু আসলে গাছের জননাঙ্গ read more..
ক্যান্সার সারানোর উপায়
10th July Wednesday 2024
ক্যান্সার এই নামটি শুনলেই আমাদের রক্তে ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে যায়। ভারতবর্ষের মত দেশে বেসরকারি হাসপাতালে ক্যান্সারের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। সরকারি হাসপাতালে অব্যাবস্থায় ক্যান্সার রুগীর চিকিৎসা সময়সাপেক্ষ আর ক্যান্সারের read more..

Write A Comment