ক্যান্সার সারানোর উপায়


ক্যান্সার এই নামটি শুনলেই আমাদের রক্তে ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে যায়। ভারতবর্ষের মত দেশে বেসরকারি হাসপাতালে ক্যান্সারের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। সরকারি হাসপাতালে অব্যাবস্থায় ক্যান্সার রুগীর চিকিৎসা সময়সাপেক্ষ আর ক্যান্সারের কোষ দ্রুত সংখ্যায় বাড়তে থাকে, তাই একজন ক্যান্সার রুগীকে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করা অত্যন্ত ঝুঁকি পূর্ণ হয়ে ওঠে।  চিকিৎসা ব্যবস্থার এই হালের জন্যই সাধারণ মানুষ ক্যান্সার নিরাময়ের জন্য বিভিন্ন অলটারনেটিভ চিকিৎসার দিকে ঝোঁকে। সোশাল মিডিয়াতে সাধারণ মানুষ ক্যান্সার নিরাময়ের টোটকা হাতড়ে বেড়ায়। যে কারণে লেখাটির হেডিং দেখে আপনি লেখাটি পড়তে এসেছেন সেই একই কারণে কিছু ইউটিউবার, কিছু স্বঘোষিত গুরু, বাবা, বিদ্বজনেরা ক্যান্সার সম্পর্কে বিভিন্ন টিপস দিয়ে বেড়ান। এর মধ্যে কিছু উল্লেখ যোগ্য টিপস হল:

চিনিঃ কিছু লোক বলেন ক্যান্সার হলে চিনি খাবেন না, কারণ চিনি বা সুগার থেকেই শক্তি নিয়ে ক্যান্সার সেল গ্রোথ হয়। অথচ সুগারের সাথে ক্যান্সারের ডিরেক্ট কোন সংযোগই এখনও অবধি পাওয়া যায়নি। বেশি সুগার খেলে আপনার ওবেসিটি বাড়তে পারে এবং ওবেসিটি বেশি হলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। মনে রাখবেন সুগার থেকে শুধু ক্যান্সার সেলই শক্তি গ্রহণ করে না। আপনার দেহের যাবতীয় ভালো সেল গুলোও সুগার থেকেই শক্তি গ্রহণ করে। তাই আপনার শরীরে যতটা সুগার দরকার, আপনি যদি ক্যান্সারের কারণে তার থেকে কম সুগার খান আপনার দেহের স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া গুলো ও ব্যাহত হতে পারে। তবে হ্যাঁ ডায়বেটিক রুগীদের অবশ্যই সুগারের মাত্রার ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা জরুরী।

অ্যালকালাইন খাবার:খাবারের পিএইচ মাত্রার ওপর নির্ভর করে কোন খাবার অ্যাসিটিক বা অ্যালকালাইন হয়। কিন্তু আমাদের দেহের পিএইচ মাত্রা একটি স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়াতে কন্ট্রোল হয়। খাবার খেয়ে রক্ত বা সেলের পিএইচ মাত্রা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। অ্যালকালাইন খাবার খেলে আপনার শরীরের বর্জ্য যেমন পেচ্ছাপ বা থুতু ইত্যাদিতে অ্যালকালাইন মাত্রা পরিবর্তন হতে পারে কিন্তু রক্তে বা শরীরের সেলে পিএইচ পরিবর্তন হয় না। অতয়েব অ্যালকালাইন খাবার খেয়ে ক্যান্সার নিরাময় বা ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা প্রতিরোধের ধারনাটি ভুল।

মোবাইল রেডিয়েশনঃ মোবাইল থেকে যে ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক তরঙ্গ নির্গত হয় তা আসলে নন-আয়নাইজ তরঙ্গ, অর্থাৎ মোবাইল থেকের নির্গত তরঙ্গে এতটা শক্তি নেই যা কোন পদার্থের ইলেকট্রনের বন্ড ভাঙতে পারে। তাই মোবাইল থেকে নির্গত রেডিয়েশন আমাদের শরীরের কোন ডিএনএর পরিবর্তনও করতে পারে না। সুতরাং মোবাইলের রেডিয়েশন থেকে ক্যান্সার হতে পারে না।

মাইক্রোওয়েভঃ মাইক্রোওয়েভ থেকে নির্গত তরঙ্গও নন-আয়নাইজ। মাইক্রোওয়েভের বাক্স টি এমনভাবে তৈরি যে এই তরঙ্গ মাইক্রোওয়েভের এর বাইরে আসতে পারে না। এই তরঙ্গ কেবল মাত্র খাবারের জলের অণুগুলিকে ভাইব্রেট করে তাপ উৎপন্ন করতে পারে। নন-আয়নাইজ তরঙ্গ হওয়ায় মাইক্রোওয়েভ থেকে নির্গত রেডিয়েশন আমাদের শরীরের কোন ডিএনএর পরিবর্তন করতে পারে না। বরং মাইক্রোওয়েভের খাবার বয়েল করা খাবারের থেকে বেশি পরিমাণে পুষ্টি গুন বজায় রাখতে পারে। মাইক্রোওয়েভের রেডিয়েশন থেকে ক্যান্সার কোন প্রমাণ এখনও অবধি পাওয়া যায়নি।

সরাসরি গ্যাসের আগুনে তৈরি খাবার:এই কথা সত্যি রান্নার গ্যাসের মধ্যে কারসেনোজেন গ্যাস থাকে কিন্তু যেই মুহূর্তে আমরা রুটি বা বেগুন পোড়ানোর জন্য গ্যাস জ্বালাই, এই কারসেনোজেন গ্যাস নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া ও রান্নার গ্যাসে কারসেনোজেন গ্যাস এতটাই কম পরিমাণে থাকে, এত কম কনসেন্ট্রেশনে থাকে যা খাবারে আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

পরিশেষে বলি ক্যান্সার হলে কি করতে হবে কি করতে হবে না তা জানতে ডাক্তারের পরামর্শ নিন অথবা সাইন্সের পেপার পড়ুন। হোয়াটসঅ্যাপ বা, ইউটিউব ব্লগার বা নিউজ পেপার থেকে ক্যান্সার সম্পর্কে তথ্য গ্রহণ করবেন না ।।


Written by rourab

10th July Wednesday 2024



   Share  

Write A Comment