রেজিগনেশন লেটার
যা কিছু ভালো, যা কিছু প্রিয়, ছাড়তে ছাড়তে অনেকটা এগিয়ে এসেছি। মৃত্যু, ডিভোর্স, পতন, ভেঙে যাওয়া আর তার যুদ্ধ, এসব আর আমায় ভাবায় না। বরং রাস্তার একটা অচেনা বাচ্চার হাসি, মা এর মত দেখতে রাস্তার এক বৃদ্ধার বলিরেখা, ফুটপাতের কোনায় পরে থাকা বাসী গোলাপ ফুল, ক্যান্টিনে বসে থাকা রিসার্চ স্কলারের নির্লিপ্ত এক জোড়া চোখ আমায় মাথার মধ্যে পাকদণ্ডি বেয়ে ওপরের দিকে উঠতে থাকে। অনুভূতিকে বস্তুবাদে নেমে আসতে দেখি আমার গলায়। একটা দলা পাকানো কিছু গলায় আটকে থাকে। এপাশ, ওপাশ, ঘর্মাক্ত বিছানা, বালিশ উলটে নিয়েও ঘুমোতে পারিনা। সমস্ত চেনা মানুষদের পেছনে ফেলে দৌড়চ্ছি। বারবিকিউর বিজয় উল্লাসে বা লালচে ওয়াইনে ভেসে ওঠা মুখমণ্ডলে যে যুদ্ধ জয়ের ছবি ফেসবুকে আসে বারবার তার মধ্যে আমি নেই। ফালুটের সেই বিশাল আকাশের মাঝে একলা ট্রেকারস হাট আমার নিঃসঙ্গতাকে আত্মবিশ্বাস ছুড়ে দেয়; রাত একটার দশাশ্বমেধ ঘাট পৃথিবীর নীরবতা আর ননসেন্স কে অর্থবহ করে তোলে , সুন্দরবনের সেই বিশ্বাসঘাতক মালা জড়ানো গাছটা যে বনবিবির পূজা নেওয়ার পরেও একটা গোটা প্রাণ নিয়ে গেছিল দক্ষিণ রায়, আমি তার মধ্যে বেঁচে থাকতে চাই। ভীষণভাবে বেঁচে থাকতে চাই। আমার পরীক্ষা দেওয়ার অভ্যাস যারা নষ্ট করে দিয়েছে, যারা আমার যোগ্যতার নিরিখে জয়ের আগেই বলেছিল "ওকে জিতিয়ে দেওয়া হোক", আমি তাদের ঘৃণা করি। সিগারেটর আগুনের মত পা দিয়ে মারিয়ে নিভিয়ে দিতে ইচ্ছে হয়। এই হিংসার আর ছেড়ে যাওয়ার স্মৃতির পরও আমার ভেতরে বেঁচে আছে কিছু প্রিয় মানুষ। যারা সড়ে যাচ্ছে ক্রমশ, দূরে চলে যাচ্ছে ক্রমাগত। সর্বাঙ্গ ডুবে যাওয়ার পর চোরাবালির ওপরে দেখা যাচ্ছে তাদের শুধু হাতটুকু। রেসিগ্নেশন লেটার ঘামচে ধরে হাত গুলো আমার চোখের দৃশ্যপট থেকে আস্তে আস্তে তলিয়ে যাচ্ছে। হয়তো চোরাবালির নীচেই প্রকৃত স্বর্গরাজ্য, আর তার ওপরে আমার নরক যন্ত্রণা। প্রেমিকাকে লেখা শেষ ইমেলের থেকে বেশী মূর্ত হয়ে চলছে রেসিগ্নেশন লেটারগুলি। আমি শুধু নবারুণের পঙক্তি নিয়ে বেঁচে থাকি "আসছে, আসছে, দেবে, দেবে"
Written by rourab
27th June Tuesday 2017
Share
Write A Comment