লেসার ইভিল
ব্যক্তিগত ভাবে আমি কোনো ধর্ম ও ধর্ম সংক্রান্ত কোনো রীতি নীতি কে মান্য করি না। আমাদের বিয়ের সময় ও আমি এবং আমার স্ত্রী দুজনের সহ মতে কোন অগ্নি সাক্ষ্য, মন্ত্র, ও হিন্দু রীতি নীতি গ্রাহ্য করিনি। এরপর ও প্রায় এক বছরের বেশি সময় আমরা অতীব সুখ, শান্তি ভালোবাসায় আমাদের জীবন অতিবাহিত করছি। ভবিষ্যতে আমাদের সম্পর্কে কোনো অবনতি হলে তা সম্পূর্ণ পার্থিব কারণের জন্যই হবে। আমরা যখন নতুন গাড়ি এবং স্কুটি কিনি, সেগুলি কোনো মন্দিরে নিয়ে গিয়ে কোনো লাল ওড়না জড়িয়ে বা চন্দন বুলিয়ে পুজো করিনি। আমি বিশ্বাস করি এরপর যদি কোনো দুর্ঘটনা হয়, তা সম্পূর্ণ বস্তু জগতের কার্য কারণেই ঘটবে।
দীর্ঘ সাড়ে তিন বছরের লড়াইয়ের পর মা যখন গত মাসে মারা যান, আমি এবং আমরা কোন রকম মুখাগ্নি বা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সংক্রান্ত কোন নিয়ম কানুন ছাড়াই প্রাকৃতিক নিয়মে মা'কে দাহ করেছি। ধর্মের প্রকৃত উৎস আমাদের সংস্কৃতি। অনেক সময় ধর্মীয় রীতি নীতি আমাদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে যায়। তাই কিছু ধর্মীয় রীতি নীতি আমি উদযাপন করি ধর্মীয় কারণে নয়, কেবল মাত্র সাংস্কৃতিক কারণে । এমনকি আমার অত্যন্ত কাছের মানুষরা যখন কোনো ধর্মীয় রীতি নীতি সাংস্কৃতিক কারণের জন্য পালন করেন, আমি
তাতে অংশগ্রহণ করি এবং তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করি। এই মুহূর্তে কোনো সংগঠন বা একক ব্যক্তি যদি এই দ্বিতীয় শ্রেণীর 'ধর্মীয় কারণের ধর্মীয় বিশ্বাসের' বিরুদ্ধে কথা বললে, সেই সংগঠনের বা ব্যক্তির কোনো সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না। কারণ আমাদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট এখন ও এতটা প্রাপ্তবয়স্ক হয়নি যে, ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে ধর্ম প্র্যাকটিসের কঠিন বিরুদ্ধাচরণ কে মেনে নেবে।
যদি প্রায় দেড়শ বছর পিছিয়ে ও যাই, স্বয়ং বিদ্যাসাগর বিধবাবিবাহ স্বপক্ষে রাধাকান্ত দেব ও ধর্ম জ্ঞানী পণ্ডিত দের যুক্তি দিতে গিয়ে ধর্ম এবং ধর্ম গ্রন্থের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। বিদ্যাসাগর নিজে ধর্মীয় গোঁড়ামির ঊর্ধ্বে ছিলেন। বিধবাবিবাহর স্বপক্ষে প্রকৃত যুক্তি মানবিক ও জৈবিক চাহিদা হলেও সমাজে বিধবাবিবাহ কে প্রতিষ্ঠিত করতে তিনি ধর্মীয় যুক্তি কেই শ্রেয় মনে করেছিলেন। দূরদর্শী, জ্ঞানী ও বিবেচক সমাজ সংস্কারক হিসেবে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন তৎকালীন সমাজ বিধবা বিবাহের প্রকৃত কারণকে মান্যতা দেবে না, তাই তিনি পরাশর সংহিতার একটি শ্লোক কে উল্লেখ করে ধর্ম পণ্ডিত দের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন এবং বিধবা বিবাহ কে সামাজিক মান্যতা দিতে বাধ্য করেন। তৎকালীন সমাজে বিধবা বিবাহের সাফল্য মণ্ডিত প্রভাব এত টাই সুদূরপ্রসারী ছিল যে বিধবাবিবাহর পক্ষে বিদ্যাসাগরের এই ধর্মীয় ননসেন্স যুক্তি তে সমাজের কিছু যায় ই আসে না। একইভাবে বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে যারা ধর্মীয় কারণে ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করেন তাদের নাস্তিক যুক্তি ও নীতির দ্বারা বিরোধিতা না করে, বিদ্যাসাগরের আঙ্গিকে সফট ধর্মীয় যুক্তি দিয়েই তাদের ধর্ম বিশ্বাস কে চ্যালেঞ্জ করতে হবে।
আব্বাস সিদ্দিকি বিদ্যাসাগর নন, তিনি একজন ধর্ম গুরু। তার সাথে আমি অনেক কিছুতেই একমত নই। এই অপ্রাপ্তবয়স্ক সমাজে আমি তার সাথে একশ পা চলব, একশ এক তম পা'তে তিনি ভাতের লড়াই ছেড়ে জাতের লড়াইতে নামলে, আমি তার সাথে থাকবো না। তবে আব্বাস তো বলছেন 'আল্লাহ বলেছেন শুধু মুসলমান নয়, কোনো মানুষই যেন অভুক্ত না থাকেন'। তিনি তার সঙ্গী দের বলেছেন 'আল্লাহ বলেছে শুধু মুসলমান নয় পৃথিবীর সকল মানুষকে ভালো করতে হবে'। এই অপ্রাপ্তবয়স্ক সমাজে ধর্মীয় গোঁড়ামির থেকে মানুষকে টেনে তুলতে প্রাথমিক ভাবে আপাতত ধর্মের যুক্তিই প্রয়োজন, অতএব ধর্মের যুক্তিতে ধর্মের লড়াইয়ের থেকে ধর্মের যুক্তিতে ভাতের লড়াই হোক 'লেসার ইভিল '।
Written by rourab
13th March Saturday 2021
Share
Write A Comment